ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ , ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরির লোভ দেখিয়ে রাশিয়ায় পাচার, ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত

আপলোড সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ১১:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ১১:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
চাকরির লোভ দেখিয়ে রাশিয়ায় পাচার, ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত ফাইল ছবি
ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা নরসিংদীর শিবপুরের সন্তান হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া (২০) দালালের খপ্পরে পড়ে চলে যান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে। দেশীয় কিছু দালাল তাকে ঠেলে দেন মৃত্যুর মুখে। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হামলায় হাবিবুল্লাহ মারা গেছেন। শনিবার (৩ মে) নিহত হাবিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত হাবিবুল্লাহ শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক ভূঁইয়া ও মানসুরা বেগমের ছোট ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।পরিবারের সদস্যরা জানান, ইতালি নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে একাধিক দালাল হাবিবুল্লাহকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। দালালরা তাকে ২০ লাখ টাকায় রুশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। নিদারুণ কষ্ট, নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছিলেন হাবিবুল্লাহ। পরিবার এ মৃত্যুর খবর পায় তারই এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

হাবিবুল্লাহর বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, এইচএসসি পাস করার পর থেকেই ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল হাবিবুল্লাহ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্রাহ্মন্দী গ্রামের এক দালাল ফারুকের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে পরিবার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দালালের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহকে সৌদি আরবে নেওয়া হয় ওমরাহ ভিসায়। সেখানে দুই মাস অবস্থান করিয়ে তাকে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।হাবিবুল্লাহর বাবা আরও বলেন, আমার ছেলে ইতালি যেতে চেয়েছিল। দালালরা তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছে। চাইলে আমাদের কাছেই টাকা চাইতো, কিন্তু তারা টাকার লোভে আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা মানসুরা বেগম বলেন, ছেলে দেশে ফেরার জন্য কাঁদতো, আর আমরা অসহায়ের মতো কিছুই করতে পারিনি। এত টাকা খরচ করেও আজ তাকে কফিনে দেখতে হবে? এই দালালরা অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই এবং সরকারের কাছে ছেলের মরদেহ ফিরিয়ে আনার আবেদন জানাই।জানা যায়, গত ২৭ মার্চ রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি ইউনিটের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশ নেন হাবিবুল্লাহ। যুদ্ধ শেষে তারা বিশ্রামের সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান। বুধবার হাবিবুল্লাহর মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছায় তার এক বাংলাদেশি সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

হাবিবুল্লাহর বন্ধু নাইম ইসলাম অভি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে আমার কথা হতো। দালালরা তাকে মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে। সেখানে তাকে অনেক অত্যাচার করা হয়। তাকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে জোর করা হয়। সেখানে ও নিহত হলো। আমরা এর জন্য দায়ীদের বিচার চাই।এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারিনি। যিনি নিহত হয়েছেন, তার পরিবার তথ্য দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো এবং দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ